জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

করোনায়; দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে করণীয় কী!

 মুতাসিম বিল্লাহ 

‘মরমু বইলা করমু না কাম, বাঁচলে খামু কী’ বরিশালের মানুষের এই প্রবাদের মতো বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবন করোনায় বেঁচে গেলেও জীবনকে যাপন করার কামড় থেকে তারা কিভাবে বাঁচবে! এমন ভাবনায় অনেকেই দিশেহারা। এখন বাংলাদেশের মানুষের সংকট ৩টি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ভয়, করোনায় আয় রোজগার বন্ধ হয়ে হতাশার সাগরে হাবুডুবি তথা ক্ষুধায় কোনো কিছু না পাওয়া নিম্নবিত্ত মানুষের যবনিকাপাতের আশঙ্কা ও করণার কারণে গৃহবন্দী অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুর শঙ্কা।



সাম্প্রতিক নিম্নআয়ের মানুষের উপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব কতটা পড়েছে তা জানতে দুই হাজার ৬৭৫ জনের উপর একটি জরিপ চালিয়েছে ব্র্যাক। করোনার প্রকোপ শুরুর আগে জরিপে অংশ নেয়াদের গড় পারিবারিক আয় ছিল ১৪ হাজার ৫৯৯ টাকা। মার্চে তা নেমে এসেছে তিন হাজার ৭৪২ টাকায়। অর্থাৎ, তাদের গড় আয় ৭৫ ভাগ কমে গেছে। আয়ের ভিত্তিতে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯ ভাগই চরম বা হতদরিদ্র্যের স্তরে নেমে গেছেন। এ কারণে আগের তুলনায় চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষনা দলটি। এই প্রাপ্ত তথ্য বলছে আগামী দিনে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ কতটা সংকটে পড়তে পারে!

 

সুতরাং সরকারকে শুধু করোনা মোকাবেলা করাই একমাত্র সমাধান না ভেবে এর পাশাপাশি মানুষের খাদ্য সংকট নিয়ে ভাবতে হবে। এই জরিপে দেখা যায় ৯৬ শতাংশ মানুষ মনে করে করোনাভাইরাস মোকাবেলা এবং এর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার পর্যাপ্ত সহায়তা দিচ্ছে না সাধারণ মানুষকে। যে বিষয়ে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। ব্র্যাকের জরিপ চলাকালীন ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে কোনো খাবার ছিল না। ২৯ ভাগের ঘরে ছিল এক থেকে তিন দিনের খাবার। সরকারের জরুরি ত্রান পৌঁছেছে মাত্র চার শতাংশ মানুষের কাছে।

আমরা যদি ইতিহাসে ফিরে দেখি তাহলে আমরা দেখব ভারতবর্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হিসেবে পরিচিত ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। ১১৭৬ বঙ্গাব্দে (ইংরেজি ১৭৭০) দুর্ভিক্ষটি হয়েছিল বলে একে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরবলা হয়। ১৭৫৭ সালে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ইংরেজদের কাছে পরাজিত হন। তখন থেকেই এ দেশে ব্যাপক সম্পদ লুণ্ঠন করতে থাকে ইংরেজরা। ১৭৬৫ সালে ইংরেজরা দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে। বাংলার নবাবের হাতে থাকে নামে মাত্র প্রশাসনিক ক্ষমতা। রাজস্ব আদায় এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব থাকে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির কাছে। ফলে যে শাসনব্যবস্থার সৃষ্টি হয় ইতিহাসে তা দ্বৈত শাসন নামে পরিচিত। ক্ষমতাহীন নবাবের প্রশাসনিক শাসনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি খাজনা আদায়ের নামে সীমাহীন শোষণ আর লুণ্ঠন শুরু করে। এর ওপর দেখা দেয় অনাবৃষ্টি। এতে ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। ফলে ১৭৭০ সালে বাংলায় দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। এই দুর্ভিক্ষে প্রায় এক কোটি মানুষ খাবারের অভাবে মারা যায়, যা সমগ্র বাংলার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় এবং খাদ্যশস্যের বাজারে বেশি মুনাফা অর্জন এই দুর্ভিক্ষের একটি বড় কারণ হলেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এটিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে আখ্যায়িত করে।

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে গবেষণায় বিভিন্ন পণ্ডিতরা দেখতে পেয়েছেন যে ১৯৭৪ সালে গড় খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল 'স্থানীয়ভাবে সর্বোচ্চ'। এ কারণে পন্ডিতদের যুক্তি, “১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে, খাদ্যের প্রাপ্যতার উপলব্ধতা দুর্ভিক্ষ নিয়ে যথেষ্ট ব্যাখ্যা দেয় নাতারা যুক্তি দিয়েছেন যে, খাদ্যের প্রাপ্যতার ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হয়নি বরং বিতরণ ব্যর্থতার কারণে হয়েছে, তখন একদল বাজারে খাবারের উপরে আধিপত্য স্থাপনকরেছিল। খাদ্যশস্য মজুতের সরকারী অব্যবস্থাপনা, জেলাগুলির মধ্যে খাদ্যশস্য আনা- নেয়ার সীমাবদ্ধ আইন, প্রতিবেশী দেশগুলিতে খাদ্যশস্য চোরাচালান এবং তথাকথিত বিতরণ ব্যর্থতার কারণে এ দুর্ভিক্ষ বলে মনে করেন গবেষকরা।

সুতরাং করোনা পরবর্তী দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে ইতিহাস থেকে শিক্ষা ও সমাধান বের করতে হবে। আমরা ইতিহাস থেকে দেখি, ছিয়াত্তরের মন্বন্তেরের সময়ে যে দুয়েকজন মহাপ্রাণ ব্যক্তি দুর্ভিক্ষপীরিত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসেন তাঁদের একজন হাজী মুহসীন। এ প্রসঙ্গে রজতকান্ত রায়ের মন্তব্য আর্তের পরিত্রাতা রূপে বাঙালি জাতি যে দুজনকে মনে রেখেছে, তাঁদের নাম সরকারি নথিপত্রে নেই এবং তাঁরা কেউ রাজপুরুষ নন। একজন দানবী তীর্থ পর্যটক পরদুঃখকাতর আজীবন ব্রহ্মচারী হাজী মুহম্মদ মুহসীন ও অন্যজন সাক্ষাৎ অন্নদারূপিণী পুণ্যশ্লোকা বিধবা রানী ভবানী। হাজী মুহাম্মদ মহসিন এ সময় কতগুলো লঙ্গরখানা খুলে অনাহারী মানুষকে অন্নদান করেছিলেন। কোটি মানুষের মৃত্যুর দ্বীপে দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের পাশে মাত্র গুটিকয়েক মানুষ পাশে ছিলো, এমনটিই ইতিহাস বলে।

 

ইতিহাসে প্রাচীন বাংলায় দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লিখিত প্রথম প্রমাণ মেলে মহাস্থান ব্রাহ্মী লিপিতে, বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থানে পাওয়া এই প্রাচীনতম শিলালিপিতে কর্তব্যরত মহামাত্রের নিকট জারিকৃত জনৈক শাসকের একটি আদেশ লিপিবদ্ধ করা হয়। এতে সংবঙ্গীয় নামে পরিচিত শহর ও শহরতলীর অধিবাসীদের দুর্দশা দূর করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মধ্যযুগে দেখি, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত সুফিদের খানকাহগুলো ছিলো আধ্যাত্নিক, মানবকল্যাণ ও বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যাবলির একেকটি কেন্দ্র। এসব প্রতিষ্ঠান নানাভাবে মুসলমানদের অগ্রগতি ও বাঙালি সমাজের উন্নয়নে যথেষ্ট পরিমাণে সহায়তা করে। আমরা দেখি সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সময় তুরস্কের কোনিয়া থেকে বাংলাদেশে আসা হযরত শাহজালাল দারুল ইহসাননামক একটি পবিত্র ইমারত নির্মান করেন যেখানে এই জনকল্যানমূখী কার্যক্রমই পরিচালিত হতো। এমনি করে সুলতানি আমলে নির্মিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ নির্মাণে সূফিরা সম্পৃক্ত থাকতেন। তাদের এই খানকাহগুলো ছিল দরিদ্র, নিঃস্ব, সন্ন্যাসী ও ভবঘুরে সব মানুষের জন্যই উন্মুক্ত। সুফিদের দরগাহগুলোকে দুনিয়ায় বিশ্রামদানকারী অট্টালিকারূপে বিবেচনা করা হতো যেখানে জনসাধারণের আশা পূর্ণ হতো।

আমরা যদি এ কাজের প্রেরণার উৎস খুঁজি তাহলে দেখতে পাই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইতিহ ওয়াসাল্লাম এর সময়কালে মদিনাতে মসজিদে নববীতে থাকত আসহাবে সুফফারসদস্যরা। যাদের গায়ে বড় কোনো চাদরও ছিলো না, অভাব ছিলো যাদের নিত্য সঙ্গী, (এমন অভাবী সাহাবীদের বলা হয় আসহাবে সুফফা এর সদস্য)। তাদের সংখ্যা ছিলো প্রায় ৭০জনের মতো। তারা ছিলো ইসলামের মেহমান, তাদের ছিল না কোনো পরিবার, কোনো সম্পদ, এবং কারো উপর ভরসা করার মতো কেউ। তাদেরকে যারা যা দিত তাই দিয়েই তারা দিনাতিপাত করত। এসময়ের মসজিদ শুধু মাত্র সালাত আদায়ের স্থানই ছিলো না বরং তাদের জীবনমুখী সব সমস্যার সমাধান হতো মসজিদকে ঘিরে। রাসূল সাঃ এর সামনে হাবশার লোকেরা মসজিদে বর্শা নিয়ে খেলা করত, ক্রয়-বিক্রয়ের আলোচনা করত, ঋণ পরিশোধ করত, মসজিদে রোগীদের জন্য তাবু স্থাপন করত (বুখারী-৪৫৪, ৪৫৫, ৯৮৮, ২৯০৬, ৩৫২৯, ৩৯৩১, ৫১৯০, ৫২৩৬; আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৪১)।

সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি সামনে যেন কোনো দুর্ভিক্ষ কবলে না পড়তে হয় কিংবা যেন মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়ে বেশ কিছু আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান তাদের সমস্যা সমাধানে যদি ধর্ম থেকে করা যায় তাহলে সরকারের উচিত হবে সে আলোকেই সহজ সমাধান দেওয়া। সামনে রমযান এ মাসে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে বেশি দান করতেন। তাই মানুষকে এ মাসে বেশি বেশি দান, সদকাহ করতে উৎসাহ প্রদান, পাশাপাশি যাকাত দেওয়ার বিষয়েও উৎসাহিত করা দরকার।

আমরা দেখি সিরিয়ায় মহামারী দেখা দিলে ওমর (রা.) জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে, অনেকদূর যাওয়ার পরেও তিনি সাহাবীদের নিয়ে সফর স্থগিত করে ফিরে আসেন (বোখারি, হাদিস : ৫৭২৯)। মহামারীর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার কারণেই হয়ত মহানবী (সা.) মহামারীতে মারা যাওয়া ব্যক্তিকেও শহীদ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাঁচ প্রকার মৃত ব্যক্তি শহীদ। মহামারীতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করেছে।’ (বোখারি, হাদিস : ২৮২৯) আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মহামারীর কারণে মারা যাওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত।’ (বোখারি, হাদিস : ২৮৩০), বেশির ভাগ মহামারীই সংক্রামক, তাই রাসুল (সা.) মহামারীর সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। মুমিন ইমান ও ইখলাসের সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করার ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা ছেড়ে চলে এসো না। আবার কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করে থাকলে, সে জায়গায় গমন করো না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৫)

আমরা দেখি মহাগ্রস্থ আল কুরআনের, সূরা ইউসুফে দুর্ভিক্ষ বিষয়ে করণীয় কিছু আয়াত। ইউসুফ বললো, “তোমরা সাত বছর পর্যন্ত লাগাতার চাষাবাদ করতে থাকবে, এ সময় তোমরা যে ফসল কাটবে তা থেকে সামান্য পরিমান তোমাদের আহারের প্রয়োজনে বের করে নেবে এবং বাদবাকি সব শীষ সমেত রেখে দেবে। তারপর সাতটি বছর আসছে বড়ই কঠিন সময়। এ সময়ের জন্য তোমরা যে শস্য জমা করবে তা সমস্ত সময়ে খেয়ে ফেলা হবে। যদি কিছু বেঁচে যায় তাহলে তা হবে কেবলমাত্র সেটুকুই যা তোমরা সংরক্ষণ করবে। এরপর আবার এক বছর এমন আসবে যখন রহমতের বৃষ্টি ধারার মাধ্যমে মানুষের আবেদন পূর্ণ করা হবে এবং তারা রস নিংড়াবে” (সূরা ইউসূফ-৪৭-৪৯) এর আয়াতগুলো খেয়াল করলে দেখা যায়, ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জাতিকে মহামারী মোকাবেলা যে পথনির্দেশ দিয়েছেন তাতে তিনি ৩টি বিষয় বলেছেন প্রথমত, এ সময়ে খাদ্য উৎপাদন করতে হবে, দ্বিতীয়ত, খাদ্য সংরক্ষণ ও মহামারী সময়ে সংরক্ষিত খাবার থেকে খেয়ে (অল্প খেয়ে) ধৈর্য্য ধারণ আর শেষে হলো এই মহামারী একসময় কেটে যাবে তখন আবার সুজলা-সুফলা শস্য তৈরি হবে। আমাদের ইতিহাস, ধর্ম থেকে মহামারী ও তার পরবর্তী দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় যে পরামর্শগুলো পেয়ে থাকি তাহলো-

# এ বছর কৃষি বিপ্লব ঘটাতে হবে, বাসার বারান্দা, ছাদ থেকে শুরু করে যত জায়গা আছে যেখানে সুযোগ থাকবে সেখানেই কোন না কোন শাক, সব্জি, ফসলের বাম্পার ফলনে চেষ্টা ও তাতে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

# মাছ চাষ, গবাদি পশু পালনে মডেল স্থাপন করতে হবে, এসব কাজে শিক্ষিত তরুণ ও যুবকদের শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।

# কৃষির উন্নয়নে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের বিষয়ে নজর দিতে হবে।

# মসজিদগুলো বন্ধ না রেখে, বরং যে মানুষগুলোর আশ্রয়ের কোনো জায়গা নেই, মাথা গোঁজার ঠাই নেই তাদেরকে মসজিদে হোম করেন্টাইনে রেখে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরি তদারকিতে খাওয়া, থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। যেন কোনো দুঃস্থ, অসহায় মানুষ না খেয়ে মারা যায়। 

# প্রতিটি ইউনিয়নে যুব উন্নয়নের আদলে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্ববধায়নে কৃষি উন্নয়ন বা এমন সমবায় সমিতি গড়ে তোলা, যাদেরকে সরকার সেই এলাকা উপযোগী শস্য তৈরির নির্দেশনা দিবে, এর দাম ঠিক করে দেবে এবং সময় মতো উৎপাদিত পন্য সেখান থেকে সরকার কিনে আনবে।

# গার্মেন্টসসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি হারানো মানুষ এই কৃষিকাজে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ পাবে।

# সেনাবাহীনিকে এই কর্মকান্ডে; খাদ্য সংগ্রহ ও খাদ্য বিতরণে সম্পৃক্ত করতে হবে। খাদ্যের সুষম বন্টনে যেন কোনো অশুভ শক্তি কিংবা কোনো অব্যবস্থাপনা না হয় তা নিশ্চিত করতে।

# কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষকে ঘরে না বসিয়ে রেখে মানুষ যেন সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করে তারা কাজ করে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিতে হবে। তাদের উৎপাদিত পণ্য যেন ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হয় সে জন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে পণ্যে সংরক্ষণাগার ও গুদামজাতকরণ করতে হবে।

# যারা ঘরে থাকেন তারাও যেন কোনো না কোনো প্রশিক্ষণ, শরীরচর্চা, বইপাঠে থাকেন সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

# ছিয়াত্বরের মন্বত্ত্বর ও চুয়াত্ত্বরের দুর্ভিক্ষ থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে যেন, খাদ্যশস্য মজুতের সরকারী অব্যবস্থাপনা না হয়, জেলাগুলির মধ্যে খাদ্যশস্য আনা-নেয়ায় যেন কোনো সীমাবদ্ধতা থাকে, মুনাফাখোর, অতিলোভী কেউ যেন বেশি দামের আশায় পণ্য লুকিয়ে না রাখে। 

# ভেষজ চিকিৎসা, ইউনানী ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদেরকে সরকারের আমলে নিয়ে তারা যেন এ সংকটকালে স্থানীয় জনগণকে চিকিৎসা সেবা দিতে পারে সে বিষয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে।

# ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, লবণ মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে গারগোল এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাবান দিয়ে হাত ও  ব্লিচিং দিয়ে বাড়িঘর পরিষ্কার রাখার বিষয়ে প্রচারণা অব্যহত রাখতে হবে।

কৃষি প্রধান এ দেশে শুধু ত্রাণ দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতো বসিয়ে রেখে বিপদ কাটিয়ে উঠা যাবে না, দূরত্ব বজায় রেখে, করোনায় কর্মশক্তি ও চিন্তা শক্তি না হারিয়ে ফেলে, শুধু বাসায় থেকে না ঝিমিয়ে শরীর ও মনটাকে কাজ দিতে হবে। প্রকৃতির সাথে শরীরের অভিযোজন না ঘটাতে পারলে শুধু ঘরে বসে থেকে লাভ হবে না, আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া কে টিকিয়ে রাখার জন্য যুব সমাজের অনেক বেশি ভূমিকা আছে, তাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ দিতে হবে। এখন থেকে মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে এ অঞ্চলের মানুষের করোনা সমস্যার সমাধান আমাদের দেশের অতীতে মহামারী ও দুর্ভিক্ষ থেকে উত্তরণের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজস্ব  পদ্ধতিতেই এগিয়ে যেতে হবে, ইউরোপীয় পদ্ধতিতে সব সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে না।

লেখক পরিচিতিঃ শিক্ষক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন